কোন্ পথে আমাদের সাহিত্য এবং সাহিত্যিক?

যাঁরা সাহিত্য করতে এসে সুনামের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, তাঁরা যে কোনো সময় বিপজ্জনকও হয়ে উঠতে পারেন একথা আমার মনে হয়েছে একটাই কারণে, তা হল, এঁরা বড় অধৈর্য। এঁরা একটা কথা একবারও মনে রাখেন না, কোনো ব্যক্তিরই কাউকে সুনাম দেওয়ার সাধ্য নেই। তাঁর সাহিত্যকর্মকে ভালোবেসে হয়তো তাঁকে কিছুটা সমীহ করতে পারেন এর বেশি কিছু নয়। কোনো প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে হয়তো তাঁকে সম্মান জানানো হতে পারে, কিন্তু চিরকালের জন্য সুনামের স্মরণীয় স্তম্ভ নির্মাণ করা সম্ভব নয়। সবাই একটা সীমিত সময়ে ও ক্ষেত্রে তাঁর গণ্ডি দ্বারা আবদ্ধ, এর বেশি কোনো ক্ষমতা তাঁর নেই।

ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য করতে এসে যেটুকু উপলব্ধি করেছি, তাতে প্রতিটি সাহিত্য কর্মীকেই অসম্ভব সহিষ্ণু এবং ত্যাগী হওয়া দরকার। পৃথিবীতে কোনো কিছুই স্থায়ী নয়। আমরা বেঁচে আছি আমাদের আনন্দের জন্য। কীভাবে আমাদের এই আনন্দ সংগ্রহ করা যায় এবং কীভাবে আমাদের জীবনযাপনকে সুন্দর করা যায় সেই ভাবনা থেকেই নিজের একটা অবস্থান তৈরি হয় সাহিত্যে। শুধু সুনাম বা যশ-খ্যাতির জন্য নয়। ব্যক্তিগত জীবনে অনেক সংগ্রাম থাকে একজন মানুষের। এই সংগ্রাম বেঁচে থাকার প্রতিকূল পরিবেশের বিরুদ্ধে। তারপর অনেক স্বপ্ন থাকে আগামীকে সুচারু ও সমৃদ্ধ করার। নিজস্ব এই যাপন ক্রিয়াকে ভাষা ও অলংকার সহযোগে প্রকাশ করাই হল সাহিত্যের একটি মাধ্যম। সেখানে যেমন আত্মদর্পনের ছায়াটি পতিত হয়, তেমনি মননের ভাষাটিও। উপলব্ধির স্তরগুলি জীবনের বাঁকগুলিকে স্পষ্ট করে তোলে। সেসব নিয়েই ব্যক্তির সময়, ব্যক্তির সমাজ, ব্যক্তির রাষ্ট্র, ব্যক্তির ইতিহাস, ব্যক্তির কষ্ট ও আনন্দ প্রতিফলিত হয়। এসব লেখার মধ্যেই নিজেকে খোলসা করা যায়। বিভিন্ন শৈল্পিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নতুন সৃষ্টির প্রজ্ঞাকেও পরীক্ষামূলক ভাবে তুলে ধরা সম্ভব হয়। এই সৃষ্টির মধ্যেই স্রষ্টার আনন্দ বিরাজ করে। সেই আনন্দকে সংগ্রহ করার নামই শিল্প বা সাহিত্য। এর সঙ্গে প্রাপ্তির ইচ্ছা প্রবল হলে, স্রষ্টা-সাধকের প্রকৃত ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে, অথবা কলঙ্কিত হতে পারে। যশ-খ্যাতির মোহে তিনি পাগলপারা হতে পারেন। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে শত্রু ভেবে তার নামে কুৎসা করেও নিজের হীনমন্যতা প্রকাশ করতে পারেন। আজকের দিনে এঁদের সংখ্যাটাই বেশি।

আরও পড়ুন: আত্মবিজ্ঞানের পরিধি বিস্তারে মানবিক বিশ্বের সন্ধান 

বেশ কিছুদিন থেকেই এই কথাটি আমার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে। আমি সাহিত্যের পীঠস্থান কলকাতা শহর থেকে বহুদূরে বীরভূমের একটি প্রান্তিক গ্রামে অবস্থান করি। বাঁশঝাড় আর জোনাকিজ্বলা সন্ধ্যায় আমার গ্রামে নিশির আগমন ঘটে। অনেক রাতে ঘুম ভাঙলে শিয়ালের ডাক শুনতে পাই। বাড়ির বাইরে পা ফেললেই ঘাস। কাদা জমা রাস্তা। ফাঁকা মাঠে গরু-ছাগলের পাল। বাড়ির গৃহিণীকে আঁচলের খুঁটে ঘাম মুছে এখনো ভাত রান্না করতে হয়। কোনো কোনো দিন ভেজাভাতের সঙ্গে শুঁটকি মাছ পোড়ানোর গন্ধ পাই। না আছে আভিজাত্য, না আছে শহুরে বিস্ময়কর যুবতীদের আনাগোনা। শুধুমাত্র এন্ড্রয়েড ফোনের ব্যবহারটা শিখতে পেরেছি। কম্পিউটার চোখে দেখলেও মাউসে হাত দেওয়ার ক্ষমতা হয়নি।

এই গ্রামে বসবাস করলেও ডাকপিয়নকে আমার কারণেই বারবার আসতে হয়। রাস্তাঘাট নিয়ে এই ডাকপিওনও বহু অভিযোগ করেছেন। তার জামাকাপড় কর্দমাক্ত হয়। পা পিছলে পড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। বর্ষাকালে সাইকেলও চালানো যায় না। তবুও তিনি আসেন ডাকযোগে আসা বইপত্রগুলি দেওয়ার জন্য। আমাকে তিনি নেহাত ভালবাসেন বলেই এই কাজটি করেন। কুরিয়ারের ডেলিভারি বয় গ্রামের প্রান্তে এক দাদার দোকানে সবকিছু ডেলিভারি দিয়ে চলে যান। তারপর আমাকে সেখান থেকেই আনতে হয়। এভাবেই সাহিত্য চলে। সাহিত্য চালাই।

ইদানীং মুশকিল হয়েছে অনেক অনুষ্ঠানে দেখাসাক্ষাৎ হলে, কিংবা ফোন করে ঠিকানা চেয়ে নিয়ে অনেকেই বইপত্র ও পত্রপত্রিকা দিচ্ছেন। অনুষ্ঠানগুলি থেকে বইপত্র বয়ে আনা খুব সমস্যার। এনেও শান্তি নেই। কেউ কেউ এমন ‘কবি-লেখক’ অনবরত ফোন করে যাচ্ছেন। তাঁর বইটি রিভিউ করতে হবে। তাই আগে থেকেই তিনি সতর্ক করে দিচ্ছেন। সতর্কগুলি নিম্নরূপ:

১. বানান ভুল উল্লেখ করা চলবে না।
২. কবিতা হয়নি একথাও লেখা চলবে না।
৩. কাকে অনুকরণ করেছেন তাও লেখা চলবে না।
৪. সবকিছুই পজেটিভ লিখতে হবে।
৫. এই মুহূর্তের শ্রেষ্ঠ লেখা হিসেবে উল্লেখ করতে হবে।
৬. পুরস্কার প্রদানকারীরা তাঁকে পুরস্কার না দিয়ে ভুল করেছেন এটা উল্লেখ করতে হবে।
৭. তিনি একজন বড় মাপের লেখক, নিজেকে আত্মগোপন করে রাখেন এটা জানাতে হবে।
৮. সকলেই যাতে তাঁর লেখা পড়েন তার আবেদন করতে হবে।
৯. অনেক উদ্ধৃতি দিয়ে বিশ্লেষণ করতে হবে।
১০. আলোচনার শেষে ফোন নাম্বার ও যোগাযোগের ঠিকানা দিতে হবে।

সব লেখকের যে এরকম সতর্কশর্ত দেন তা কিন্তু নয়, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই শর্তগুলি নানা ছলে, নানা কৌশলে জানিয়ে দেন। আমার মতো একজন সামান্য ব্যক্তিকে এইভাবে সতর্কবদ্ধ করে বই পাঠিয়ে বিরক্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন তা নিজেরাও একবার ভেবে দেখছেন না। আমি সাহিত্যকে ভালবাসি, সাহিত্যিককে ভালবাসি তাই বিভিন্ন বইপত্র পড়ে নিজের ইচ্ছাধীন মতামত জানাই। কিন্তু এভাবে জোর জুলুম যে হারে বাড়ছে, তাতে নিজেকেও আর সহিষ্ণু হিসেবে পরিচয় দিতে পারছি না। যেহেতু আমি কারও অধঃস্তন কর্মচারি নই। কোনো সম্পাদক তাঁদের পত্রপত্রিকায় যদি আমার লেখা না ছাপান তবুও কোনো ক্ষতি নেই। কারণ বর্তমানে আমি আর লিখতেও চাই না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমি শর্ত পালন করা কোনো সুনামের মেশিন নই। অনেক বন্ধুই পরামর্শ দিয়েছেন এই পথ পরিহার করার। কিন্তু কিছু তরুণ-তরুণীকে কিছুটা উৎসাহ প্রদান করার এবং সাহিত্যপাঠে আগ্রহী করে তোলার জন্যই এই কাজটা করে থাকি।

আরও পড়ুন: যৌবনে নির্জন একাকিত্বে জীবনানন্দ

সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছেন, প্রবল নাম-যশ-খ্যাতিলোভী কিছু সাহিত্যিক। তাঁদের পড়াশোনার দীনতা এতই বেশি যে, দীর্ঘদিন এই পথে থেকেও সিলেবাসের বাইরে কোনো পড়াই পড়েননি। কবিতা বা ছোটগল্প বলতে সেকেলে ধারণা নিয়েই নিজের জানার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের মতো কবিতা. সুকুমার রায়ের মতো ছড়া এবং ‘এক যে ছিল রাজা’র মতো ছোটগল্প লিখেই তাঁরা মাত্ করে দেবেন এটাই ভাবেন। নিত্যনতুন পরিবর্তনের পথ ধরে সাহিত্যের অগ্রসরমানতা কোনোদিনই এঁদের গোচরে আসে না। সম্প্রতি একজন একটি বৃহৎ ছড়ার বই পাঠিয়েছেন। ছড়াগুলি পড়তে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের ‘সহজ পাঠের’ তৃতীয় ভাগ মনে হল। কয়েকজন বেশকিছু কাব্যগ্রন্থ পাঠিয়েছেন। কয়েকটি কাব্যগ্রন্থের খুব সাধারণ বানানগুলিও ভুল। যেমন ‘সাধারণ’ ও ‘ভুল’ বানান দুটিই লেখা হয়েছে ‘সাধারন’ ও ‘ভূল’ বানানে। কবিতার ভাব প্রকাশে ছন্দের ছিটেফোঁটাও ব্যবহার নেই। এমনকী কাব্যিক ভাষাও নেই বললেই চলে। যে গদ্যে লেখা হয়েছে, তাকে গদ্যও বলা চলে না। বালখিল্য অথবা শিশুর দেয়ালা বলা যেতে পারে। এইসব কাব্যগুলি হাতে নিয়ে ভাবি: এদের বই ছাপানোর প্রয়োজন হল কেন! বাজারে অনেক প্রকাশনা টাকা দিলেই এইসব ‘কবিতা কোষ’ ছাপানো হয়। পুরস্কার দেওয়ার প্রতিষ্ঠানেরও অভাব হয় না। তাহলে সমালোচনার বা আলোচনারই-বা প্রয়োজন হয় কেন? কবিতা লিখতে আসা বা গদ্য লিখতে আসা লেখক-কবিরা পড়াশুনা করেন না কেন? পড়াশোনা না করেই, বাক্য গঠন না শিখেই কেন তাঁরা সাহিত্যিক হতে চান? গণতন্ত্রের যুগে অনেক মূর্খ শাসকও শিক্ষিতদের শাসন করেন। সাহিত্যের রাজ্যেও কি তবে এবার মূর্খ সাহিত্যিক-কবিরা শাসন করবেন?

আমার কথা অনেকেই মানতে চান না, রে রে করে ওঠেন। কিন্তু প্রকৃত অর্থে যদি তিনি সেইসব বইপত্র লেখাজোখা যাচাই করে দেখতেন তাহলে নিজেও অবাক হতেন। কত নিম্নমানের লেখা সেগুলি। কত ভুলে ভরা প্রতিটি পৃষ্ঠা। কবিতার যে একটা অধরা সৌন্দর্য আছে, একটা অপার্থিব আকর্ষণ আছে, একটা ভাষাহীন বোধের তীব্র মোচড় আছে, একটা উপলব্ধির জাগরণ আছে—এইসব লেখায় তার কিঞ্চিৎও টের পাওয়া যায় না। বরং চোখের সামনে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা উল্টে গেলেও এক বিরক্তিকর বিভ্রান্তির অকাজের মধ্যে জোরপূর্বক প্রবিষ্ট করানো হয়। সেখানে না আছে আনন্দ, না আছে নতুন কিছু প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা। পাইকারি হারে প্রকাশক কয়েক কপি ছাপিয়ে কবির কাছে পাঠিয়ে দেন। কবি সেগুলিই বিলি করেন। আর আমার মতো প্রায় নির্বাসিত একজনকে তা পাঠিয়ে দেন। অধিকাংশ সময়ে বিদ্যুৎ না থাকা হারিকেনের আলোয় আমি সেগুলোর পৃষ্ঠা মেলে ধরি আর আরও তীব্র অন্ধকার হয়ে যায় আমার চোখ। আমি প্রায় পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যাই।

আমরা কবি হতে চাই, লেখক হতে চাই, কিন্তু প্রকৃত সাধক হতে চাই না। প্রকৃত সাধকের কখনো সুনাম এর প্রয়োজন হয় না। সুনাম আপনা থেকেই আসে, তা জোর করে পাওয়া যায় না। প্রতিভাধর ব্যক্তিরা তাঁদের প্রতিভার জোরেই সকলের কাছে প্রতিভাত হন। কিন্তু প্রতিভাহীন ব্যক্তিরাই বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে আত্মসমালোচনার অভাব। ‘আত্মসমালোচনা’ কথাটি শুনে একজন আমাকে বলেছিলেন: আত্মসমালোচনা করব কেন? আমি যা করি তাই সঠিক। আমার যা মন চায়, তা-ই করব! আপনি নিজেরই আত্মসমালোচনা করুন।

অর্থাৎ তিনি আত্মসমালোচনার ধারেকাছেও যাবেন না। দরকার হলে নুনেরও রসগোল্লা বানাবেন। এরকম একটা সময়ে সাহিত্য বা পত্রপত্রিকা সমালোচনা যে খুব কাম্য তা নয়। এসব করতে গিয়ে নিজেরই ক্ষতি করে দিচ্ছি। যখন কারও জ্ঞান নেওয়া দরকার নেই, কোনো কিছু শেখারও দরকার নেই, তখন কারও সঙ্গেই আমারও দরকার থাকতে পারে না। যখন সবারই সুনাম দরকার, তখন আমার মতো সমালোচকের কী মূল্য আছে? একজন কবির চরিত্র কেমন হবে, বা কবি কতটা যন্ত্রণাবিদ্ধ হয়েও কবিতায় হাস্যমুখ উজ্জ্বল করবেন তা বলে দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: মন্দ হাওয়া  

সোরেন কিয়ের্কেগার্ড (১৮১৩-৫৫)।তিনি ছিলেন একজন দিনেমার দার্শনিক, ধর্মতাত্ত্বিক, কবি, সামাজ সমালোচক এবং ধর্মীয় লেখক যাঁকে প্রথম অস্তিত্ববাদী দার্শনিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।তাঁর মূল্যবান বক্তব্যটি হল:

“What is a poet? An unhappy man who hides deep anguish in his heart, but whose lips are so formed that when the sigh and cry pass through them, it sounds like lovely music…. And people flock around the poet and say: ‘Sing again soon’ – that is, ‘May new sufferings torment your soul but your lips be fashioned as before, for the cry would only frighten us, but the music, that is blissful.”
(Soren Kierkegaard, Either/Or)

অর্থাৎ কবি কাকে বলে? একজন অসুখী মানুষ যে তাঁর হৃদয়ে গভীর যন্ত্রণা লুকিয়ে রাখে, কিন্তু যাঁর ঠোঁট এমনভাবে গঠিত যে দীর্ঘশ্বাস এবং কান্না যখন তাদের মধ্য দিয়ে যায়, তখন এটি মনোরম সঙ্গীতের মতো শোনায় … এবং লোকেরা কবিকে ঘিরে ধরে বলে: ‘শীঘ্রই আবার গাও’ -অর্থাৎ, ‘নতুন যন্ত্রণা যেন আপনার আত্মাকে যন্ত্রণা দেয় কিন্তু আপনার ঠোঁট আগের মতোই সাজে, কারণ কান্না আমাদের ভয় দেখায়, কিন্তু সঙ্গীত, সেটাই আনন্দদায়ক।

এই কবি কি যশের জন্য হম্বিতম্বি করতে পারেন? তিনি তো হৃদয়ে তাঁর যন্ত্রণা লুকিয়ে রাখেন, তাঁর কান্না লুকিয়ে রাখেন, আর তারপরেও হাসি ছড়িয়ে দেন। আত্মসমালোচক তো তেমনই হবেন। নিজেকেই বুঝবেন, নিজের বোঝার মধ্য দিয়েই অন্যকে বুঝাতে পারবেন। আত্মসমালোচক প্রকৃত অর্থে সঠিক মানুষ এবং সত্যের মানুষ। নিজের সৃষ্টিকে তাই বারবার পাল্টাতে চান এবং নতুন সৃষ্টির জন্য তাকে ধ্বংস করেন।

সিডোনি-গ্যাব্রিয়েল কোলেট (১৮৭৩-১৯৫৪) ফরাসি লেখক এবং চিঠিপত্রের মহিলা, একজন মাইম, অভিনেত্রী এবং সাংবাদিকও। এ বিষয়ে তাঁর উল্লেখযোগ্য বক্তব্য হল :

“Put down everything that comes into your head and then you’re a writer. But an author is one who can judge his own stuff’s worth, without pity, and destroy most of it.”
(Casual Chance, ১৯৬৪)

অর্থাৎ আপনার মাথার মধ্যে যা আসে তা লিখে রাখুন এবং তারপরে আপনি একজন লেখক। কিন্তু একজন লেখক হলেন তিনি যিনি তাঁর নিজের জিনিসের মূল্য নির্ণয় করতে পারেন, করুণা ছাড়াই, এবং বেশিরভাগই ধ্বংস করতে পারেন।

যাঁদের আত্মসমালোচনা নেই, তাঁদের সৃষ্টির ধ্বংসও নেই। যা সৃষ্টি করেছেন তা-ই শ্রেষ্ঠ। তারই সুনাম করতে হবে। তা সমালোচনার ঊর্ধ্বে। সমালোচনার নামে যা হবে তা শুধু প্রশস্তি। সুতরাং আমাদের সাহিত্য কোন্ পথে যাচ্ছে তা প্রতিটি সচেতন পাঠকই জানেন। মুশকিল হচ্ছে এত বইপত্র, পত্রপত্রিকা সবই কি পাঠযোগ্য? কেন আমার সময় নষ্ট করব সেসব পাঠ করে? তাহলে আমরা কীভাবেই বা এর বিচার করব? কখনোই তা সম্ভব হবে না। সবকিছু পাঠ করার যেমন উপযুক্ত নয়, তেমনি পাঠের যোগ্যতাও সবার নেই। প্রতিটি লেখক-কবিকেই তাই আত্মসমালোচনার পথ ধরে স্বপাঠক এবং স্বসমালোচক হতে হবে। নিজেকে নিজেই শাসন করার থেকে আর কোনো বড় শাসক নেই। নিজেকে নিজেরই সামনে দাঁড় করাতে হবে। যে কাজটি এই মুহূর্তে সব থেকে কঠিন একটি কাজ।#

Facebook
Twitter
LinkedIn
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!