রানা চক্রবর্তী

ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু একজন সাধারণ মানুষ।

নবাবী আমলে বাঙালির সাহিত্য ও ভাষাচর্চা

বাংলা সাহিত্যের গবেষকদের মতে, খৃষ্টীয় অষ্টাদশ শতকের বাংলা সাহিত্যে বৈচিত্র্য থাকলেও এতে প্রধানতঃ সপ্তদশ শতকের জের টানা হয়েছিল। এসময়ে ধর্মমঙ্গল, কৃষ্ণলীলা, রামায়ণ-কাহিনী, ময়নামতী-গোপীচন্দ্রের কাহিনী প্রভৃতি বাঙালি কবিদের উপজীব্য হয়ে উঠেছিল। তাছাড়া ভাগীরথী-তীরবর্তী বাঙালি নাগরিক সমাজে তখন বিদ্যাসুন্দরের প্রণয়-কাহিনী জনপ্রিয় ছিল। ঐতিহাসিকদের মতে, নবাবী আমলের বাংলার প্রধান তিনজন কবি ছিলেন—রামেশ্বর ভট্টাচার্য, ভারতচন্দ্র রায় এবং রামপ্রসাদ সেন।…

Read More

জীবনের ব্যথা থেকে বিদ্রোহ: কবি নজরুলের সাহিত্যভুবন

কালবৈশাখী ঝড় যেমন নিজের সহজ ও প্রবল আত্মপ্রকাশে চকিত আবির্ভাবে বিশ্বসংসারকে একেবারে অভিভূত করে দেয়, ঠিক এরকমভাবেই আধুনিকযুগের বাংলা কাব্যজগতে একদা কাজী নজরুল ইসলামের চমক লাগানো আবির্ভাব ঘটেছিল। এই জগতে আবির্ভুত হয়ে তিনি প্রথমেই নতুনের কেতন উড়িয়ে দিয়েছিলেন, আর তারপরে মহাকবি রবীন্দ্রনাথের চরণে নিজের প্রণতি রেখে অনুরাগভরা দৃষ্টিতে কবিঅগ্রজ সত্যেন্দ্রের দিকে তাকিয়েছিলেন। আর এর বদলে…

Read More

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে সুভাষচন্দ্র ও হাওড়া জেলা

রবিদাস সাহারায় তাঁর ‘আমাদের শরৎচন্দ্র’ গ্রন্থে জানিয়েছিলেন যে, সুভাষচন্দ্র দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনকে নিজের রাজনৈতিক গুরুপদে বরণ করে নেওয়ার আগে হাওড়া শহরের বাসিন্দা কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁকে নিজের রাজনৈতিক গুরুপদে বরণ করে নিয়েছিলেন। প্রসঙ্গতঃ স্মরণীয় যে, ১৯২১ সালে দেশবন্ধুই শরৎচন্দ্রকে হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি করে দিয়েছিলেন। (আমাদের শরৎচন্দ্র, রবিদাস সাহারায়, পৃ: ১০৯ ও ৯৭) এসময়ে সুভাষচন্দ্র ও…

Read More

প্রাচীন থেকে আধুনিকযুগে বাঙালির পত্রচর্চা

বাঙালির পত্র রচনার ইতিহাস কম প্রাচীন নয়। বর্তমানে বিজ্ঞানের অবদানের জন্য চিঠিপত্রের প্রয়োজন অনেকটাই কমে গিয়েছে। কিন্তু এখন থেকে কিছুকাল আগেও বাঙালি চিঠি লিখত, এমনকি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে পত্র-সাহিত্য বলে একটি আলাদা বিভাগও রয়েছে। এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে অতীতের বাঙালির পত্রচর্চার কিছু ইতিহাস তুলে ধরবার চেষ্টা করা হল। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর একটি…

Read More

প্রাচীন ভারতে বিষকন্যা

বিষকন্যা নামটি উঠলেই, প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের সাথে যাঁরা মোটামুটি পরিচিত, তাঁদের মানসে যে দুটি নাম ভেসে উঠবে, সেগুলি হল— চাণক্য ও চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য। কিন্তু ইতিহাস বলে যে এই বিষকন্যার ব্যাপারটি কিন্তু সেই আমলের থেকেও বেশি প্রাচীন। অর্থাৎ— মৌর্য্য আমলের আগেও ভারতে বিষকন্যা ছিল, হঠাৎ করেই সেযুগেই বিষকন্যার উৎপত্তি হয়নি। বস্তুতঃ বিষকন্যারা কিন্তু মহাভারতের যুগ থেকেই…

Read More

বৈষ্ণবপদাবলীর মুসলিম পদকর্তা

মধ্যযুগের বাংলার বৈষ্ণবপদাবলীর মুসলিম পদকর্তাদের নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে প্রথমেই যে কথাটা উল্লেখ্য, সেটা হল যে, এঁরা কেউই ধর্মের দিক থেকে বৈষ্ণব ছিলেন না; এঁরা সকলেই বৈষ্ণব-ভাবাপন্ন ছিলেন। এখানে বৈষ্ণব-ভাবাপন্ন শব্দটি বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। অতীতে যেসব বাঙালি গবেষক বৈষ্ণবপদাবলী নিয়ে গবেষণা করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে সর্বপ্রথম যতীন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য এসব কবিদের জন্য এই বিশেষ শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছিলেন। এবিষয়ে গবেষণা…

Read More

বাংলা লিপি ও পাঠশালার উৎস

বর্তমানে সকলেই এবিষয়ে অবগত রয়েছেন যে, খৃষ্টীয় ঊনিশ শতকে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা লিপি এবং বাংলা গদ্যের বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনিই বর্তমান সময়ে প্রচলিত থাকা বাংলা বর্ণমালাকে সুসংহত ও সহজবোধ্য করবার জন্য প্রমিত রূপ দিয়েছিলেন, এবং একাজের জন্য ‘বর্ণপরিচয়’ নামক গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন, যা তখন ও পরবর্তীসময়ে বাংলা ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি…

Read More

আধুনিক বাঙালির চোখে কবি জয়দেব

বাংলার বৈষ্ণব পদাবলীর আদি কবিকুলগুরু জয়দেব একজন ধর্মীয় কবিরূপে মধ্যযুগের ভক্তমাল গ্রন্থ থেকে শুরু করে গোবিন্দদাসের কবিপ্রণাম পদে সমভাবেই শ্রদ্ধা অর্জন করে এসেছিলেন বলে দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু তাঁকে নিয়ে প্রথম গোলমালের সূত্রপাত ঘটেছিল আধুনিকযুগে পৌঁছে। মধ্যযুগের মতোই, খৃষ্টীয় ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধের ইউরোপীয় সমালোচক ও অনুবাদকরাও প্রথমে জয়দেবের গীতগোবিন্দ কাব্যের লৌকিক বর্ণনায় মুগ্ধ হলেও, পরবর্তীসময়ে…

Read More

বাংলার পাঠশালায় মুসলমান পড়ুয়া

বর্তমানে প্রায়শঃই একটা অভিযোগ করা হয় যে, অতীতে মুসলমান ঘরের সন্তানদের নাকি হিন্দু ঘরের সন্তানদের সাথে পাঠশালায় পঠন-পাঠন করতে দেওয়া হত না, বা মুসলমান ঘরের সন্তানরা পাঠশালায় যেতেন না। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, বাংলায় আধুনিক শিক্ষার যুগ শুরু হওয়ার আগে এদেশে পাঠশালা, টোল, মাদ্রাসা, মক্তব—এগুলিই মূল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। এসবের মধ্যে আবার টোল ও…

Read More

বাংলা পুঁথিতে ও সরকারি নথিতে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর

আঠারো শতকের বাংলায় বর্গী হাঙ্গামার ক্ষত ভাল করে শুকোবার আগেই সুবা বাংলা পুনরায় এক তীব্র জটিল রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্তে জড়িয়ে পড়েছিল। ইতিহাস বলে যে, ১৭৫৬ সাল থেকে শুরু করে ১৭৬৫ সাল পর্যন্ত বাংলায় একটার পর একটা গুরুতর রাজনৈতিক ঘটনা দ্রুত লয়ে ঘটে গিয়েছিল; যথা—সিরাজউদ্দৌলার মসনদে আরোহণ, ১৭৫৬ সালের জুন মাসে তাঁর কলকাতা আক্রমণ ও জয়, ঐতিহাসিক…

Read More

গল্পকার নজরুল

নিজের বিদ্রোহাত্মক কবিতাগুলির জন্য কাজী নজরুল ইসলাম বর্তমান জনমানসে বাঁধ-ভাঙা বেপরোয়া বিদ্রোহী যৌবনের এক প্রতীকরূপে প্রতিপন্ন হয়ে থাকেন। এই বিদ্রোহাত্মক কবিতাগুলিই তাঁর এধরণের ভাবরূপের নির্মাতা। কিন্তু তাঁর এই কবিতায় আচ্ছন্ন থাকা এযুগের অনেক পাঠক-পাঠিকাই হয়ত এবিষয়ে অবহিত নন যে, বাংলা সাহিত্যে নজরুলের প্রথম আত্মপ্রকাশ কিন্তু ছোটোগল্পের মাধ্যমেই ঘটেছিল। তাঁর জীবনেতিহাস বলে যে, তিনি প্রায় একইসময়ে…

Read More

রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে প্রেম

বিংশ শতাব্দীতে বসন্তরঞ্জন রায় সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলনের আলোচনা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন— “প্রতিভার স্ফুর্তির ন্যায় প্রেমের স্ফুর্তিও একটি মাহেন্দ্রক্ষণ একটি শুভমুহূর্তের উপর নির্ভর করে। হয়ত শতেক যুগ আমি তোমাকে দেখিয়া আসিতেছি, তবুও তোমাকে ভালবাসিবার কথা আমার মনেও আসে নাই—কিন্তু দৈবাৎ একটি নিমিখ আসিল তখন না জানি কোন গ্রহ কোন কক্ষে ছিল—দুইজনে চোখাচোখি হইল, ভালবাসিলাম।…

Read More
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!