রানা চক্রবর্তী

ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু একজন সাধারণ মানুষ।

বাংলা নববর্ষ ও হালখাতা: ঐতিহাসিক উৎসের সন্ধানে

ইতিহাস বলে যে, বর্তমান সময়ে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে উৎসব পালন করবার যে রেওয়াজটা প্রচলিত রয়েছে, সেটা কিন্তু খুব একটা পুরোনো নয়। তাছাড়া সুবিশাল ভারত ভূখণ্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে বছর হিসেব করবার পদ্ধতিগুলিও কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন ধরণের। তাই স্বভাবতঃই বাংলায় পয়লা বৈশাখ তারিখে নববর্ষ পালনকে কেন্দ্র করে বিস্তৃত আলোচনার অবকাশ প্রায় থাকেই না। তবে নতুন বছরকে অভ্যর্থনা…

Read More

প্রাকৃত ভাষার উৎপত্তির ইতিবৃত্ত

আলোচ্য প্রসঙ্গে আলোকপাত করবার জন্য প্রথমেই প্রাকৃত ভাষার উৎপত্তির বিষয়ে প্রাচীন ভারতের দু’জন পণ্ডিতের বক্তব্যকে এখানে তুলে ধরা যেতে পারে। হেমচন্দ্র নামের একজন প্রাকৃত বৈয়াকরণ বলেছিলেন— ‘প্রকৃতি সংস্কৃতং তত্র ভবঃ তত আগতং বা প্রাকৃতং।’ অর্থাৎ — ‘সংস্কৃতই হচ্ছে প্রকৃতি বা মূল। তার থেকে যা এসেছে বা উৎপন্ন হয়েছে সেটাই হল প্রাকৃত।’ তাঁর মতোই ‘প্রাকৃতচন্দ্রিকা’ গ্রন্থের…

Read More

শেখ ফয়জুল্লা ও নাথ সাহিত্য

শেখ ফয়জুল্লা বাংলা ভাষায় — গোরক্ষবিজয়, গাজীবিজয় ও সত্যপীরের পাঁচালী — রচনা করেছিলেন। এছাড়া অতীতে ঐতিহাসিকেরা ‘মীর ফয়জুল্লা’ ভণিতায় রচিত কতগুলি বৈষ্ণবপদ পেয়েছিলেন, সেগুলিও শেখ ফয়জুল্লার রচনা বলেই মনে হয়। গোরক্ষবিজয় কাব্যটি প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম একটি বিশিষ্ট রচনা। কিন্তু সেই কাব্যটির রচয়িতা কে এবং সেটির রচনাকাল কি, — অতীতে সেসম্বন্ধে গবেষকরা এক বিরাট সমস্যার…

Read More

দোলযাত্রা – সমন্বয়ের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য

সমগ্র ভারতে একই উৎসব প্রচলিত রয়েছে, এমন উদাহরণ মোটামুটিভাবে তিনটির বেশী পাওয়া যায় না। সেই উৎসব তিনটি — হলদশেরা, দেওয়ালী এবং দোল। লোকসাংস্কৃতিক গবেষকদের মতে, প্রথম দুটির মধ্যে মানুষের ধর্মীয় অনুষঙ্গটুকু উৎসবমনস্কতার থেকে প্রবলতর হয়েছে, কিন্তু দোলযাত্রার ধর্মানুষঙ্গটি এর উৎসব-মুখরতার কাছে প্রকৃতপক্ষে গৌণই হয়ে গিয়েছে। সেদিক থেকে দেখলে এটিই হল একমাত্র সর্বজনীন সর্বভারতীয় উৎসব, যেখানে…

Read More

প্রাচীনকালে বাঙালীর বসন

কাশ্মীরী কবি ক্ষেমেন্দ্র তাঁর ‘দশোপদেশ’ গ্রন্থে কাশ্মীর প্রবাসী গৌড়ীয় বিদ্যার্থীদের বেশ অদ্ভুত রকমের একটা ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। খৃষ্টীয় দশম-একাদশ শতকে প্রচুর গৌড়ীয় বিদ্যার্থী বঙ্গদেশ থেকে কাশ্মীরে বিদ্যালাভ করবার জন্য যেতেন। ক্ষেমেন্দ্র লিখেছিলেন যে, তাঁদের প্রকৃতি ও ব্যবহার রূঢ় এবং অমার্জিত ছিল। তাঁরা অত্যন্ত ছুঁৎমার্গী ছিলেন; তাঁদের দেহ ছিল ক্ষীণ — কঙ্কালমাত্র সার; একটু ধাক্কা লাগলেই যেন…

Read More

ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতির পটভূমিকায় শিব ও শিবরাত্রি

অতীতে মহেঞ্জোদড়োতে তিনমাথাওয়ালা কোনো একজন দেবতার চিত্রসম্বলিত একাধিক মোহর পাওয়া যাওয়ার পরে হরাপ্পাবিদ্যার প্রথম আচার্য স্যার জন মার্শাল তাঁকে পৌরাণিক শিবদেবতার আদিরূপ বলে সিদ্ধান্ত করেছিলেন। হরাপ্পা-সংস্কৃতির স্বরূপ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে যতই বিরোধ থাকুক না কেন, অন্ততঃ এই একটি বিষয় নিয়ে এখনও অবধি কেউই দ্বিমত পোষণ করেননি। বাস্তবিক পক্ষে, ভারতীয় পৌরাণিক ঐতিহ্যে শিবের যে বহু বিচিত্র…

Read More

কোম্পানি আমলে আধুনিক শিক্ষা ও মাতৃভাষার বঞ্চনা

বেনিয়া-শাসনের প্রথম যুগে বঙ্গদেশে ইংরেজি-শিক্ষা বিস্তারের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা কোম্পানির শাসকদের ছিল না। ১৭৫৭ সালের পরবর্তী প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে তাঁরা ভারতের মাটিতে নিজেদের অবস্থানকে রাজনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে সুদৃঢ় করতে সচেষ্ট ছিলেন। তখন বঙ্গদেশে ইংরেজদের প্রতিষ্ঠিত আদালতের কাজের সুবিধার জন্য পণ্ডিত-মৌলভীদের নিয়োগ করতে হত বলে তাঁরা বাংলায় সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা-চর্চায় উৎসাহ দিয়েছিলেন।…

Read More

চর্যাপদের রচয়িতাদের ধর্মমত

চর্যাপদগুলির মাধ্যমে বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যরা যে ধর্মমত প্রচার করতে চেয়েছিলেন, সেগুলির আলোচনা প্রসঙ্গে অতীতের বিভিন্ন ব্যাখ্যাতারা বৌদ্ধধর্মমতের বিভিন্ন ‘যান’ বা সাধন-পদ্ধতির সমন্বয়টাই যে সেইসব সিদ্ধাচার্যদের মূল লক্ষ্য ছিল — সেদিকেই বেশি করে জোর দিয়েছিলেন। ইতিহাস বলে যে, চর্যাপদের সমকালীন বাংলার ভাবলোকে আত্মবিস্মৃতি এবং আত্মস্বাতন্ত্র্যরক্ষার প্রেরণা যুগপৎ কার্যকরী হয়েছিল, এবং সেই বোধের স্বাক্ষর চর্যাপদের বিভিন্ন গীতগুলির মধ্যে…

Read More

জীবনানন্দের প্রথম তিনটি কাব্যগ্রন্থ

জীবনানন্দ দাশের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ হল – ঝরা পালক। এই গ্রন্থের প্রথম সংস্করণের শিরোনাম পৃষ্ঠায় গ্রন্থটির প্রকাশকাল হিসাবে – ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ – লেখা হয়েছিল। গ্রন্থটির ভিতরে ভূমিকা অংশে জীবনানন্দ ভূমিকা লিখে তারিখ দিয়েছিলেন – ১০ই আশ্বিন ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ। কিন্তু গ্রন্থটির ভূমিকায় আশ্বিন মাসের তারিখ থাকলেও জীবনানন্দ গবেষকদের মতে গ্রন্থটি পৌষ মাসের কোনো এক সময়ে প্রকাশিত…

Read More

ইতিহাসের দৃষ্টিতে দেবী সরস্বতী

দেবী সরস্বতীই সম্ভবতঃ হিন্দুদের পূজিত দেবদেবীদের মধ্যে একমাত্র দেবী, যাঁর উদ্ভব এবং স্বরূপ সম্বন্ধে এত অজস্র এবং এত পরস্পর-অসম্পৃক্ত তথ্য বেদ-পুরাণ-উপনিষদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন লোকপুরাণ এবং কিংবদন্তীগুলির মধ্যে থরে-থরে ছড়িয়ে রয়েছে, যেগুলো থেকে তাঁর সঠিক ঐতিহাসিক পরিচয় উদ্ধার করা রীতিমত দুরূহ ব্যাপার। প্রাচীন হিন্দু পুরাণবৃত্তান্তের বিভিন্ন পর্যায়ে এমনভাবে এই বিশেষ দেবীকে দেখা যায় যে,…

Read More

ঊনিশ শতকের বাংলার মুসলিম সমাজ ও আধুনিকতা

নিজের নিজের ধর্ম, সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতির মধ্যযুগীয় ঐতিহ্য নিয়ে বাংলার হিন্দু-মুসলমানরা একত্রে বৃটিশ আমলে প্রবেশ করেছিলেন; বাংলা ও বাঙালীর ইতিহাসে সেটাই আধুনিক যুগ নামে পরিচিত। আরবদের মত ইংরেজদেরও বাণিজ্যতরী প্রথমে বাংলার মাটিতে নোঙর ফেলেছিল। ১৬৯০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও কলকাতা ক্রয় করে নিজেদের বাণিজ্য-কুঠি নির্মাণ করেছিল। ১৬৯৬ সালে নিরাপত্তার কারণ…

Read More

মানুষ সত্যেন্দ্রনাথ

বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অন্যতম সুহৃদ অধ্যাপক প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ একবার তাঁর একটি বক্তৃতায় বলেছিলেন – “আচার্য বসুর বৈজ্ঞানিক দিকটা যদিও বা বাইরে থেকে কিছুটা বোঝা যায়, কিন্তু মানুষ সত্যেন্দ্রনাথকে বোঝা খুব সোজা নয়।” আর তাঁর ছাত্র রবীন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন – “সত্যেন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত সান্নিধ্যে আসার সৌভাগ্য আমরা পেয়েছি অনেক পরে – তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে…

Read More
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!