প্রাচীন যুগে নারীর হাতে বোনা বীজ দিয়ে চাষাবাদের প্রচলন হয়েছিল, মানুষ পশুপালন থেকে কৃষি সভ্যতার দিকে এগিয়ে গিয়েছে, সেখানে কৃষিক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা সহজেই অনুমেয়। গ্রাম বাংলার নারীদের কাছেও অনেক কাজের মধ্যে কৃষিই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বীজ সংরক্ষণ ও বপন থেকে শুরু করে, চারা রোপণ, সেচ, ফসল উত্তলন এমনকি বিপণনেও নারীরা এককভাবে ভূমিকা পালন করেন।
বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষিতে নারীর অবদান নতুন করে আলোচনার আর কোনো অবকাশ রাখে না। বাংলাদেশে গ্রামীণ সমাজে কৃষিকাজে নারী এই অবদান যে কেবলমাত্র খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে তা নয়। বরং মানব জীবনের নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে খাদ্য নিরাপত্তা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারা। অনেকের মতে, খাদ্য নিরাপত্তা জাতীয় নিরাপত্তার অন্যতম সূচক। এতে কোনো দেশের মর্যাদা যেমন বাড়ে- অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে কৃষি, বনায়ন ও মৎস্য খাতের সাথে যুক্ত আছেন ৬৮.১ শতাংশ নারী। নারী তার নিজ যোগ্যতায় কৃষিখাতের হাল ধরছেন। কিন্তু, কৃষিতে নারীর ভূমিকা শুধু ‘সাহায্যকারী’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে, কিন্তু কৃষি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী হিসেবে নারী উপেক্ষিত হয়ে আছে।
আরও কষ্টের বিষয় হল, প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে কৃষিখাতে এ বিপুল জনগোষ্ঠীর দেয় শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করা হয় না। যেসব নারীরা দিনমজুর হিসেবে অন্যের জমিতে কাজ করে তারা প্রতিনিয়তই মজুরী বৈষম্যের শিকার হয়, সেই সাথে রয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে তাদেরকে কাজে নিয়জিত রাখা এবং অন্যান্য মানসিক নিপীড়ন। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ৩৪৫ ধারা অনুযায়ী, নারীপুরুষের সমকাজে সমান মজুরি প্রদানের কথা থাকলেও, চারা রোপণ ও ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে পুরুষদের দৈনিক মজুরি যেখানে ৬০০ টাকা, নারীরা সেখানে পায় মাত্র ৩৫০ টাকার মতো। কাজেই, আপাতদৃষ্টিতে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির পেছনে নারীর ক্ষমতায়নের কথা মনে হলেও এর মূল নেপথ্যে রয়েছে স্বল্প মজুরি দিয়ে দীর্ঘক্ষণ কাজ করানোর সুবিধা। এদিক দিয়ে যারা নিজ জমিতে শ্রম দেয়, তাদের চাষাবাদের কাজে নিযুক্ত হবার বিষয়টি বর্তমান সভ্য সমাজেও নারীদের প্রাত্যহিক কাজের অংশ হিসেবেই ধরা হয়, মজুরী প্রদানের বিষয়টি সেখানে নিতান্তই হাস্যকর।
আরও পড়ুন: প্রকৃত কবির খোঁজে, কবিতার খোঁজে
বাংলাদেশ জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ তে, নারীর সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য প্রণীত ২২ টি লক্ষ্যের মধ্যে নবম লক্ষ্যটি হল সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে নারীর অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি প্রদান করা, কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে কৃষিখাতে নারী শ্রমিকের কোন বৈধ পরিচিতি নেই। পাঠ্যপুস্তকের কবিতায় কিষাণ–কিষাণী শব্দের ব্যবহার থাকলেও, প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ‘কিষাণী’ শব্দটির কোন ব্যবহার নেই। তবে কি ধরে নেওয়া যায়, নারীর কাজের মর্যাদা পূর্বের তুলনায় কমে গেছে নাকি সাহিত্যিকরাই কেবল তাদের কাজের মূল্যায়ন করতে পারে, তাদের আর্থ-সামাজিক নিপীড়নের কথা লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরতে পারে? সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবার দায়িত্ব যাদের, তাদের কি কিছু করার নেই নারীর কাজের সঠিক মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে?
৮ মার্চ জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত নারীর অধিকার ও মর্যাদা উদযাপনের জন্য নির্ধারিত দিন। বাংলাদেশের ৮৮ শতাংশ গ্রামীণ নারী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষিকাজে জড়িত। তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী দিবসের প্রাক্কালে গ্রামীণ নারীদের কথা, তাদের অবদান এবং লড়াইয়ের কথাগুলো আলোচনায় থাকাটা হবে সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশের কৃষি এবং খাদ্য নিরাপত্তার প্রধান বীরযোদ্ধা মূলত নারীরাই। তাই নারী দিবসের সকল আয়োজন, আলোচনা কেবলমাত্র শহরে মধ্যবিত্ত নারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে গ্রামীণ নারীদের মধ্যে আনতে হবে, এবং সম্মান জানানো প্রয়োজন আমাদের খাদ্য লড়াইয়ের বীর নারীযোদ্ধাদের।
১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ, আমেরিকায় নারীরা তাদের যেসব মৌলিক অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছিল তার কতটুকু বর্তমান সময়ে বাস্তবায়িত হয়েছে? ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা কৃষিতে নারীর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য হিসেবে “অন্ন জোগায় নারী” শ্লোগানটি নির্ধারণ করেছিল। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান মতে, অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ মিলিয়ে কৃষিতে নারী কৃষকের হার ৪৩ শতাংশ। বিশ্বব্যাপী যে পরিমাণ ফসল উৎপাদিত হয়, তার ৮০ শতাংশই আসে পারিবারিক কৃষি থেকে। চাষের জন্য জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলা ও বাজারজাতকরণের পূর্ব পর্যন্ত কৃষিখাতের ২১ ধরনের কাজের মধ্যে ১৭টিতে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলার সন্দেশ ছাঁচ: বন্দে মাতরম থেকে জয়বাংলা
বর্তমানে সরকারি বিভিন্ন কৃষি-প্রণোদনা প্রদানের ক্ষেত্রে নারী কৃষকের পক্ষে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ২০১৮ সালে প্রণীত কৃষিনীতিতে ]নারী ক্ষমতায়ন’ শিরোনামে একটি অধ্যায় সংযুক্ত হয়েছে এবং নারীকৃষকরা ‘কৃষিকার্ড’ পাওয়া শুরু করেছেন; যা প্রশংসনীয়। কিন্তু কৃষিনীতিতে ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ শিরোনামে যে অধ্যায়টি সংযুক্ত হয়েছে সেখানে নারীদের অবদানের কথা এবং বিভিন্ন ধরণের সেবাপ্রাপ্তির বিষয়ে বলা হলেও ‘নারী কৃষক’ স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। সরকারি কৃষি উপকরণ প্রদানের ক্ষেত্রে যে বৃহৎ সংখ্যাক প্রান্তিক কৃষকের নাম দেখা যায় সেখানেও নারী কৃষকরা উপেক্ষিত থাকছেন; আবার যাদের নাম রয়েছে সেটিও শুধু তালিকায় নাম দেখানো বা কার্ড পাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ।কৃষিতে কর্মরত নারীদের কৃষক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে। গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করতে হবে তাদের প্রত্যক্ষ অবদানকে। আমাদের দেশে মোট শ্রমশক্তির প্রায় অর্ধেক নারী। দেশের কৃষি ও এর উপখাতের মূল চালিকাশক্তি নারী। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক কোনো পরিসংখ্যানে নারীর এ উপস্থিতির হিসাব নেই। গ্রামে বসবাসরত প্রতিটি নারীই নিজ নিজ পরিবারে কৃষি ও কৃষিকাজের সাথে জড়িত। প্রত্যক্ষভাবে কৃষিখামার কিংবা কৃষিজমিতে কাজ করা নারীর সংখ্যা কম হলেও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অনেক নারীকে এই খাতে শ্রম দিতে হয়। পারিবারিক প্রতিপত্তি ও সামাজিক মর্যাদার কারণে নারীরা নিজের ঘরে কিংবা খামারে পরিশ্রম করলেও তা প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করেন। গ্রামের প্রতিটি পরিবারে মা, স্ত্রী, কন্যা কোনো না কোনোভাবে কৃষিসংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত। কিন্তু ব্যাপারটি খুব একটা প্রকাশ্যে আসে না। এ ক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুশাসন ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা কাজ করে।
কৃষিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে দরিদ্র ভূমিহীন এবং উপজাতি নারীদের বেশি সম্পৃক্ত হতে দেখা যায়। কৃষিকাজে সম্পৃক্ত নারী একই সঙ্গে ঘরের কাজ ও কৃষিকাজ সম্পাদন করেন। তারপরও এ দেশে কৃষিক্ষেত্রে নারীর অবদান অদৃশ্য ও অস্বীকৃত রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে কৃষি খাতে অংশগ্রহণকারী নারী শ্রমিকের কোনো সংখ্যা তথ্য নেই। কৃষিকাজে পুরুষের সমান অংশগ্রহণ করেও নারীর পরিচয় থাকছে কেবল গৃহিণী হিসেবে।
বাস্তবে কৃষিতে নারীর অবদান এখন পর্যন্ত স্বীকৃতি পায়নি। এমনকি গৃহপালিত পশুপালন থেকে শুরু করে কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতের আয়ের টাকার ভাগও নারীকে দেয়া হয় না। কৃষিতে নারীর সংশ্লিষ্টতা অবদান ব্যাপক ও বিস্তৃত। এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য হলো- বীজ সংরক্ষণ; বীজ বাছাই, শোধন ও অঙ্কুরোদগম বীজ শোধন; বীজতলায় বীজ বপন; চারা তোলা; চারা রোপণ; কৃষি পঞ্জিকা পুষ্টিসম্মত রান্না কৌশল; খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ; কর্তন উত্তর কৌশল; শস্য সংরক্ষণ; কৃষি উৎপাদন পরিকল্পনা; কৃষি শ্রমিক ব্যবস্থাপনা; জৈবকৃষি; মুরগি পালন; হাঁস পালন; ছাগল পালন; গরু পালন; দুধ দোহন; গরু মোটাতাজাকরণ; ডিম ফোটানো; হাঁস-মুরগি পালন; বসতবাড়িতে শাকসবজি ফল ফুল চাষ; ভেষজ চাষ; কবুতর পালন; কোয়েল পালন; নার্সারি ব্যবস্থাপনা; মাতৃগাছ ব্যবস্থাপনা; মৌচাষ ; শীতল পাটি হোগলা তৈরি; অঙ্গজ বংশবিস্তার; বায়োগ্যাস কার্যক্রম; বনসাই/অর্কিড/ক্যাকটাস চাষ; কুল বার্ডিং; খাঁচায় মাছ চাষ; পুকুরে আধুনিক উপায়ে মাছ চাষ; জ্যাম জেলি আচার কেচাপ স্যুপ আমসত্ত্ব তালসত্ত্ব; মাছের সাথে হাঁস-মুরগির চাষ; ভাসমান সবজি চাষ; ঘাস চাষ; উন্নত চুলায় রান্না; কুটির শিল্প; মাশরুম চাষ; আলুর কলার চিপস; চানাচুর তৈরি; ছাদে বাগান; বাহারি মাছ; পারিবারিক শাকসবজি সংগ্রহ; পারিবারিক শাক ফলমূল সংরক্ষণ; জ্বালানি সংগ্রহ; কৃষি বনায়ন; সামাজিক বনায়ন… এর সবগুলোতেই নারী সংশ্লিষ্ট। ভাবতে হবে নারী আমাদের উন্নয়ন সমৃদ্ধির অত্যাবশ্যকীয় অংশীদার। সুতরাং তাদের মান মর্যাদা পাওনা স্বীকৃতি যৌক্তিকভাবে যথাযথভাবে দেয়া নিশ্চিত করতে পারলে আমরা আরো দূরের আলোকিত বাতিঘরে পৌঁছতে পারব কম সময়ের মধ্যে।
প্রসঙ্গটি এই কারণে আনা যে– কৃষিতে নারীর যে অবদান তা পারিবারিক, সামাজিক বা দেশের অর্থনীতি কোন জায়গায়ই স্বীকৃত নয়। এই বিশাল কর্মশ্রম নারী করে সংসারের আর দশটা কাজের মতোই অবশ্য করণীয় কাজ ভেবে বিনাপারিশ্রমিকে। (এখানে মনে হতে পারে নিজের সংসারে কাজের আবার পারিশ্রমিক কেন?) সে প্রসঙ্গে পরে আসি।
আরও পড়ুন: জ্যোতি পোদ্দারের কবিতা ‘চৌকাঠ’
আমাদের প্রধান উৎপাদনশীল কৃষি পন্য হলো ধান,পাট, ডাল, গম, ভুট্টা বা আরও অনেক কিছু। যশোর খুলনা অঞ্চলের একটা বড় অর্থকরী কৃষি পন্য খেজুরগুড়। এর সমস্ত উৎপাদনের প্রথম থেকে শেষ অব্দি নারীর শ্রম জড়ানো। আমি যদি এভাবে বর্ণনা করি, বীজ সংরক্ষণ করা থেকে শুরু করে বীজকে বাছাই করে, ভালো করে শুকিয়ে আলাদা ভাবে রাখা যার পুরো কাজটাই করে নারী। বীজ বাড়ি থেকে মাঠে রোপণ হওয়ার পরও মাঠে যে লোকজন কাজ করে তাদের খাবারের জোগান নারীকেই দিতে হয়। ফসল পেকে কৃষকের বাড়ি অব্দি আসতে না আসতেই শুরু হয় গৃহিণীর আসল কাজ। ফসল পালা দিয়ে রাখা, রোদে শুকানো, মাড়াই করা, ঝাড়া বা বাতাসে ওড়ানো তারপর বস্তাবন্দি করে বাজারে পাঠানো পর্যন্ত কাজে নারী ওতোপ্রোতভাবে জড়িত থাকে। পাটের ক্ষেত্রেও তাই, আবার খেজুরগুড়ের সময় রসের পাত্র পরিষ্কার করা, পোড়ানো থেকে শুরু করে গুড়-পাটালি ঘরে তোলা পর্যন্ত নারী সেই দায়িত্ব পালন করে।
গবাদিপশু পালনের ক্ষেত্রেও নারীর ভূমিকা সমান। গরু-ছাগলের খাওয়ানো, খড়বিচালি কাটা, গোবর পরিস্কার করা, গরুর দুধ দোয়ানো, হাঁস মুরগির দেখাশোনা যাবতীয় গৃহস্থালি কাজ নারীকে করতে হয়।কিন্তু এ-ই যে গরু, ছাগল, হাঁস মুরগি, ধান- চাল, পাট,গুড় সহ যা কিছুই সংসারে উৎপাদন হোক না কেন, নারীর অধিকার নেই এর কোন কিছুই নিজে বিক্রি করার বা কোনটা নিজের বলে দাবি করার। আলাদা করে দুটো টাকার প্রয়োজন যে নারীর থাকতে পারে এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। কিন্তু ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার, আত্মীয় পরিজন বা অতীত বর্তমান মিলে নারীরও কিছু চাহিদা থাকতে পারে বা অধিকার থাকা উচিত সেটা এখনো পর্যন্ত সমাজ মনে করে না। ব্যতিক্রম হয়তো কিছু আছে কিন্তু ব্যতিক্রম তো আর উদাহরণ হতে পারে না। সামগ্রিক চিত্রটা এরকমই। আমি নিজের চোখে দেখেছি একজন সারাজীবন উদয়াস্ত পরিশ্রম করা গৃহিণীকে, যার ওষুধ কেনার জন্য নিজের হাতে উৎপাদন করা ধান বা চালের থেকে দু-এক কেজি বা নিজের গরুর একপোয়া দুধ কী ভীষণ ভয়ে ভয়ে চুরি করে বিক্রি করতে! কারণ তার ব্যথার ওষুধটাও সংসারে কেউ কিনে দেয়া না। অর্থাৎ সারাজীবন হাড়ভাঙা পরিশ্রমের কোন মূল্য তার নেই!
আরও পড়ুন: বিল্পবী মনোরমা মাসীমা
এখনো এমন ঘটনা ঘটে যে বাড়ির বউয়ের অসুখ হলে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়! অযত্নে, অবহেলায় অতিরিক্ত পরিশ্রমে অসুস্থ হয়ে পড়লেও তার চিকিৎসার জন্য সংসার থেকে টাকা বরাদ্দ থাকে না। যত্নে লালন-পালন করা ছাগল গরু দূরে থাক মুরগি বা ডিম বিক্রি করা টাকাটাও তার না। একটু যদি মন দিয়ে খেয়াল করি তাহলে দেখা যাবে; প্রাণপাত করে পরিশ্রম করা সংসারের কোনকিছুই নারীর না। অথচ একটা পরিবার কেউ দেখাতে পারবে না, যেখানে নারীর ভুমিকা ছাড়া পুরুষ কৃষিকাজে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সংসারের অন্য কথা নাহয় বাদই দিলাম।
পরিশেষে শুধু এতটুকু বলতে চাই- হে নারী, দেহ থেকে বেরিয়ে এসো। ফর্সা রং, পুষ্ট ঠোঁট, উন্নত বক্ষ, উত্তুঙ্গ নিতম্বকে তোমার সম্পদ না ভেবে বরং জ্ঞান অর্জনই হোক মুখ্য তোমার। জেগে ওঠো, জেগে থাকো। স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য সচেষ্ট হোক। প্রতিটি মেয়েকে সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচো আমৃত্যু।