মৃত্যুদণ্ড

২০১৪ সালে বরিশালের শূন্য দশকের কবি অভিজিৎ দাস ঢাকা থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন। এ বছর তার অন্তর্ধানের ১০ বছর হল। এখনও জানা গেল না তার ভাগ্যে কি হয়েছিল! তার জন্ম ৬ এপ্রিল ১৯৮২ জাগুয়া ইউনিয়ন, বরিশালে। তিনি বরিশাল ও ঢাকা থেকে সম্পাদনা করেছেন সাহিত্যের বিভিন্ন ছোটকাগজ, যেমন: ‘ধ্রুবতারা’, ‘দ্রোহপত্র’, ‘শূন্যমাতাল’, ‘বুকটান’। এক সময়ে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বরিশাল শাখার বিদ্যালয়ভিত্তিক বই পড়া কর্মসূচীর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বরিশালের দৈনিক আজকের বার্তা, ঢাকার দৈনিক বাংলাদেশ সময়, শিল্পকলা বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘শিল্পরূপ’-এ কাজ করেছেন।

নিখোঁজ হবার পূর্বে পাঁচটি স্বতন্ত্র কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করার মাধ্যমে তরুণ কবি হিসেবে যথেষ্ট কাব্যশক্তির পরিচয় দিয়েছেন ও প্রশংসা কুড়িয়েছেন সমালোচক ও পাঠকদের মাঝে। কবিতাগ্রন্থগুলো হলো: ‘নিগ্রো পরীর হাতে কামরাঙা কেমন সবুজ’ (২০০৮), ‘মাটির চামচ মুখে’ (২০১০), ‘ভাঙা আয়নার প্রতিবিম্বগণ’ (২০১১), ‘জন্মান্ধের স্বর ও লিপি’ (২০১২), ‘করপল্লবসঙ্গিনী’ (২০১৩) ।

তার প্রস্তুতকৃত একটি কাব্যগ্রন্থের পূর্ণাঙ্গ পাণ্ডূলিপির কপি তার সমসাময়িক কবি তুহিন দাসের কাছে সংরক্ষিত ছিল। শিরোনাম রেখেছিলেন ‘সারাটা আঁধার বেড়াবো মাতাল কুসুম বনে বনে’। কবিতার সংখ্যা ছিল ৫৪টি। সে পাণ্ডূলিপিটি পরিবারের অনুমতি নিয়ে বরিশালের ‘আরক’ প্রকাশনা থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে চার ফর্মার কাব্যগ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। প্রচ্ছদ করেছিলেন চিত্রশিল্পী রাজীব দত্ত। প্রকাশক: ভায়লেট হালদার।

‘সময়ের শব্দ’ আরক প্রকাশনার একটি অঙ্গসংস্থা। পাঠকদের আগ্রহের নিরিখে সে কাব্যগ্রন্থ থেকে একটি কবিতা ‘সময়ের শব্দ’ এর পাঠকদের জন্য এখানে পুনরায় মুদ্রিত হলো।

মৃত্যুদণ্ড

জেলখানায় যে কয়েদীর
ফাঁসির হুকুম হয়ে গেছে
সে মুখোশ পরে মরে যাবে
নাচতে দিও তাকে

ফুরফুরে অনিবার্য শোকের বাতাসে
সে যেন বাজায় মৃত্যুর করতালি
শীতের প্রাসাদে আপ্লুত কাব্যিক উচ্চারণ—
ভূমিকা অগ্রণী—বন্দী ঘুম

আমি বলব না
শোকতপ্ত মৃত্যু বিছানায়
তাকে দামী পেয়ালায় চা
অথবা রাশি রাশি তরমুজ খেতে দিও
তবে অবশ্যই বলব আলো জ্বলজ্বল করা
তার মুখ বেঁধো না মুখোশে
ও মুখে খবর পৌঁছে গেছে
রক্তগাঁথা উদ্বাস্তু খবর মরণের

কালোর পোশাকে ওর মৃত্যুকে গোপন করো না
খরাপ্রবণ ধূসর রঙের প্রশাসন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Print
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!