রানা চক্রবর্তী

ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু একজন সাধারণ মানুষ।

প্রাচীন ভারতে গণিকার স্তর

শুরুতেই প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে প্রাপ্ত ‘গণিকা’ শব্দের প্রতিশব্দগুলির দিকে নজর দেওয়া যাক:— (১) ঋগ্বেদ— হস্রা (৪:১৬:১৯:৩০), অগ্রু (৪:১৯:৯), সাধারণী (১:১৬৭:৪; ২:১৩:১২, ১৫, ১৭)। (২) অথর্ববেদ— পুংশ্চলী (১৫:১:৩৬; ২০:১৩৬:৫)। (৩) শুক্লযজুর্বেদের বাজসনেয়ী সংহিতা— সাধারণী ও সামান্যা (৩০:১২); ব্রজয়িত্রী, অর্থাৎ— যে আনন্দ দেয় (৩০:১)। (৪) কৃষ্ণযজুর্বেদের তৈত্তিরীয় সংহিতা— সাধারণী ও সামান্যা (৩:৪৭)। (৫) তৈত্তিরীয়ব্রাহ্মণ— অতিস্কদ্বরী ও অপস্কদ্বরী,…

Read More

প্রাচীন ভারতে গণিকা ও গণিকাবৃত্তি

অতীত হোক বা বর্তমানে, সমগ্র পৃথিবীতেই বিবাহবহির্ভূত যৌন সংসর্গের মধ্যে গণিকাবৃত্তি একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছে। সাধারণ অর্থে গণিকা বলতে সেই নারীকে বোঝানো হয়ে থাকে, যিনি অর্থের বিনিময়ে পুরুষ নির্বিশেষে যৌনমিলনে রত হন বা সেকাজের জন্য নিজের দেহকে সমর্পণ করে থাকেন। ইতিহাস বলে যে, পতিতাবৃত্তি হল কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন একটি ব্যবসার নাম। লোকমুখে…

Read More

জামাইষষ্ঠী’র সাংস্কৃতিক ইতিহাস

প্রথমেই জানিয়ে রাখা যাক যে, বর্তমান সময়ে হিন্দু বাঙালির অন্তঃপুরে ব্যাপকভাবে প্রচলিত জামাইষষ্ঠী অনুষ্ঠানটিতে ধর্মীয় ভাবানুষঙ্গ খুবই কম রয়েছে। আর সেটাও যতটুকু রয়েছে, তাও আবার প্রাচীন ব্রাহ্মণ্যধর্মের উৎসঙ্গ সংস্কারের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। লোকসংস্কৃতিক গবেষকদের মতে, মানুষের আদিম অরণ্য জীবনের অধুনাবধি প্রসারিত রূপান্তরিত একটি মূর্তিতে প্রাচীনতর কৌমজীবনের প্রতিভাস এর মধ্যে প্রতিবিম্বিত হয়েছে বলে দেখা যায়। অতীত…

Read More

কবি কৃষ্ণরাম দাস

কৃষ্ণরাম দাস মধ্যযুগের শেষার্ধের বাংলা সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট ও শক্তিশালী কবি ছিলেন। তিনি ছ’টি মঙ্গলকাব্য রচনা করেছিলেন; যথা— চণ্ডীমঙ্গল, কালিকামঙ্গল, ষষ্ঠীমঙ্গল, রায়মঙ্গল, শীতলামঙ্গল ও কমলামঙ্গল। কলকাতার কাছে নিমতায় তাঁর বাড়ি ছিল। এই কারণেই ‘কালিকামঙ্গল’ কাব্যের সূচনায় কৃষ্ণরাম তাঁর বাসভূমি সম্বন্ধে লিখেছিলেন— “অতি পুণ্যময় ধাম সরকার সপ্তগ্রাম কলিকাতা পরগণা তায়। ধরণী নাহিক তুল জাহ্নবীর পূর্বকূল নিমিতা…

Read More

প্রাচীন ধর্মমঙ্গলকাব্যের দুই কবি

অতীতের অনেক গবেষকেরই ধারণা ছিল যে, খেলারাম চক্রবর্তী বাংলার ধর্মমঙ্গলকাব্যের প্রাচীনতম কবি ছিলেন। তাঁদের এই ধারণার পিছনে যে কারণটি ছিল, সেটা হল যে— ১৩০২ বঙ্গাব্দের ‘জন্মভূমি’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে হারাধন দত্ত ভক্তিনিধি দাবি করেছিলেন যে, তিনি খেলারামের ধর্মমঙ্গলের একটি প্রাচীন পুঁথি দেখেছিলেন এবং সেই পুঁথিটির থেকে তিনি সেটির রচনাকাল-নির্দেশক যে ছত্র দুটি উদ্ধৃত করেছিলেন,…

Read More

কাজী নজরুল ইসলাম ও তারকেশ্বর সত্যাগ্রহ

১৩৩১ বঙ্গাব্দের ২৭শে জ্যৈষ্ঠ তারিখ থেকে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে চার-পাঁচমাস ব্যাপী তারকেশ্বর সত্যাগ্রহ আন্দোলন দুর্বারগতিতে চলেছিল। স্বামী সচ্চিদানন্দ সেই আন্দোলনের সভাপতি ছিলেন। আন্দোলনটির পরিচালকদের মধ্যে স্বামী বিশ্বানন্দ— আসানসোলের ট্রেড ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। আর আন্দোলনটির প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুল তখন হুগলি শহরের মোগলপুরা লেনের বাড়িতে থাকতেন। অধুনা বিস্মৃত কিন্তু বৃটিশ আমলের বাংলার…

Read More

কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

অতীতে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ কর্তৃক প্রকাশিত দ্বিজেন্দ্র কাব্য-গ্রন্থাবলীর ভূমিকায় সজনীকান্ত দাস লিখেছিলেন— “বাংলাদেশে দ্বিজেন্দ্রলালের কাব্যপ্রতিভা যে যথাযথ সমাদর লাভ করে নাই তাহার প্রথম ও প্রধান কারণ রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্র-প্রতিভার ভাস্বর দীপ্তিতে সকলের চক্ষু এমনই ধাঁধিয়া গিয়াছিল যে, আশেপাশের অপেক্ষাকৃত স্নিগ্ধদীপ্তি জ্যোতিষ্কের সাধারণের দৃষ্টি এড়াইয়া গিয়াছেন। দ্বিজেন্দ্রলাল এই দলের প্রধান ছিলেন।” একথা অতিশয় যথার্থ। দ্বিজেন্দ্রলাল আজও তাঁর…

Read More

দুর্ভিক্ষ ও মন্বন্তরের কবি সুকান্ত

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাস থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালে বাংলায় হয়ে যাওয়া ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের বীভৎসতার কথা জানতে পারা যায়। ১১৭৬ বঙ্গাব্দে হওয়া সেই ভয়ানক দুর্ভিক্ষে বাংলার গ্রামগুলির শ্মশান হয়ে যাওয়ার কাহিনী মর্মন্তুদ ভাষায় বর্ণনা করতে গিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন— “রাজপথে লোখ দেখি না, সরোবরে স্নাতক দেখি না, গৃহদ্বারে মনুষ্য দেখি না, বৃক্ষে পক্ষী দেখি না,…

Read More

রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন

১৯০৮ সালের ৩০শে এপ্রিল তারিখে অকস্মাৎ মজঃফরপুরে প্রচণ্ড বোমার বিস্ফোরণে সমগ্র ভারতবর্ষ সচকিত হয়ে উঠেছিল। সেই সময়কার কুখ্যাত অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে গিয়ে ভুলক্রমে ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকীর ছোঁড়া বোমার আঘাতে মিসেস কেনেডি ও তাঁর কন্যা নিহত হয়েছিলেন। এরপরেই সুরাট-কংগ্রেসের ঠিক তিনদিন আগে গোয়ালন্দে ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট অ্যালেন বিপ্লবীদের হাতে অতর্কিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তারপরে…

Read More

প্রেতপুরী থেকে মরণদোল: শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর অলৌকিক কাহিনী ২

(শেষ পর্ব) বহুরূপী (১৩৪৪ বঙ্গাব্দ): বিহারের একটি গ্রামাঞ্চলের পটভূমিতে লেখা বহুরূপীতে প্রেত সম্পর্কে একটি অভিনব তথ্যকে কেন্দ্র করে কাহিনীবৃত্ত গড়ে উঠেছে। শরদিন্দুর অধিকাংশ গল্পেই প্রেতাত্মারা বিদেহী বলে দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখানো হয়েছে যে, একটি অশরীরী আত্মা শুধু যে দেহধারণ করতে পারে তাই নয়, সে ইচ্ছারূপধারীও বটে! আবার কি কৌশলে প্রেতাত্মা দেহধারণ করতে পারে,…

Read More

প্রেতপুরী থেকে মরণদোল: শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর অলৌকিক কাহিনী ১

(প্রথম পর্ব) সাধারণভাবে অলৌকিকতা ও অতিলৌকিকতা বলতে মানুষের লৌকিক অভিজ্ঞতার সীমানা বহির্ভূত এমন কিছু রহস্যকে বোঝানো হয়ে থাকে যেগুলিকে বাস্তব যুক্তি বা বুদ্ধির দ্বারা ব্যাখ্যা করা চলে না; যেমন — ভৌতিক ক্রিয়াকলাপ, দৈব প্রভাব, জন্মান্তরবাদ, মন্ত্রশক্তি ইত্যাদি। সৃষ্টির ঘনতমসাবৃত প্রথম প্রহর থেকে শুরু করে বর্তমানের আলোকোজ্জ্বল যান্ত্রিক শতাব্দী পর্যন্ত অলৌকিক ও অতিলৌকিকের প্রতি মানব হৃদয়ের…

Read More

হরিনাথ মজুমদারের সমাজসেবা

নিজে প্রথাগত কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ করতে না পারবার ফলে কাঙাল হরিনাথের মনে দুঃখের কোন অন্তঃ ছিল না। আর সেজন্যই অন্যান্য বালক-বালিকাদের শিক্ষাদানের মাধ্যমে তিনি তাঁর নিজের অতৃপ্ত ইচ্ছাকে পূর্ণ করবার চেষ্টায় সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। গ্রাম বাংলার দরিদ্র বালক-বালিকাদের শিক্ষাদানের কাজকে হরিনাথ তাঁর জীবনের একটি অবশ্য পালনীয় ব্রত হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন। তাঁর বয়স যখন…

Read More
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!