রানা চক্রবর্তী

ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু একজন সাধারণ মানুষ।

দুর্গাপূজায় বেশ্যাদ্বারের মাটি: গূঢ়তত্ত্ব

“বাঙালির দুর্গাপুজোয় গণিকাঘরের মাটির (বেশ্যাদ্বারের মাটি) প্রয়োজন হয়। গণিকা ও গণিকালয় নির্মূল করে দিলে এ মাটি আসবে কোথা থেকে? বেশ্যাবাড়ির মাটি ছাড়া কি দুর্গাপুজো হবে? দুর্গাপুজো হবে কি হবে না, সেই ভিত্তিতে গণিকাবৃত্তিকে সমর্থন করব কি করব না সেটা নির্ভর করে না। একসময় নীলকণ্ঠ পাখি না ওড়ালে জমিদাররা দেবী বিসর্জন স্বপ্নেও ভাবতে পারত না। এখন…

Read More

লোকসাংস্কৃতিক ইতিহাসের দৃষ্টিতে মহালয়া

প্রকৃতপক্ষে মহালয়ার তিথি থেকেই দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে শারদোৎসবের সূত্রপাত হয়ে থাকে। লোকসাংস্কৃতিক গবেষকদের মতে—বাংলা সালপঞ্জির আশ্বিন মাসের অমাবস্যার এই মহালয়া নামটির উৎসের মধ্যেই এর ধর্মীয় সংস্কারগত তাৎপর্যকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব। এজন্য—এই বিশেষ দিনটিতে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করবার যে রেওয়াজ স্মরণাতীত কাল থেকে প্রচলিত রয়েছে, সবার আগে সেটারই পরিপ্রেক্ষিতে এই নামটির নিহিতার্থ সন্ধান করবার প্রয়োজনীতা দেখতে পাওয়া…

Read More

পণ্ডিত বিদ্যাসাগর ও শকুন্তলা

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যদিও সেকেলে সংস্কৃত সাহিত্য পড়েছিলেন, কিন্তু তিনি কোন সেকেলে ধরণের মানুষ ছিলেন না। আর সেই কারণেই সেযুগের অন্য পাঁচজনের মত তিনি বিদ্যা-ব্যবসায়ী টুলো পণ্ডিত না হয়ে বিদ্যাজীবী হিউম্যানিস্ট হতে পেরেছিলেন। এখনো পর্যন্ত প্রায় সকলেই একথা স্বীকার করে নিয়েছেন যে, তাঁর বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব বহমান কালের সঙ্গে চলতে গিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত প্রত্যয়ে ও সামাজিক…

Read More

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে শরৎচন্দ্র

অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের এমন এক আশ্চর্য প্রতিভা, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তাঁর আগে ও পরে— যাঁর কোন দোসর খুঁজে পাওয়া যায় না। একথা সত্যি যে, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অবশ্যই শরৎচন্দ্রের থেকে অনেক বহুবিস্তারী প্রতিভাসম্পন্ন লেখক ছিলেন, তাঁরা দু’জনেই রসসৃষ্টিতে যেমন অনন্য ছিলেন, তেমনি আবার মনীষা ও বৈদগ্ধ্যের দিক থেকে বিচিত্রপথসন্ধানী জিজ্ঞাসায়…

Read More

সর্পপূজার বিবর্তন

লোকসংস্কৃতির গবেষকদের মতে, সর্পদেবী মনসাকে বিভিন্ন অর্বাচীন পুরাণে পাওয়া গেলেও বাস্তবে তাঁকে একজন লৌকিক দেবী হিসেবেই গণ্য করা উচিত। এর কারণ হল যে, সর্প-অধিষ্ঠাত্রী দেবীর উপাসনা পৃথিবীর আদিমতম ধর্মসংস্কারগুলির মধ্যে অন্যতম। সুতরাং দশহরা থেকে শুরু করে ভাদ্র মাসের নাগপঞ্চমী তিথি পর্যন্ত ভারতবর্ষের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সর্প-উপাসনার যে ব্যাপক রেওয়াজ দেখতে পাওয়া যায়, সেটাকে দেবীভাবগত বা ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ…

Read More

বাংলা গদ্যসাহিত্যে বিদ্যাসাগরীয় রীতি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৩০২ বঙ্গাব্দে লিখিত তাঁর ‘বিদ্যাসাগর-চরিত’ প্রবন্ধের সূচনাতেই পণ্ডিত বিদ্যাসাগরের চরিত্রের সর্বপ্রধান গুণ হিসেবে তাঁর— করুণার অশ্রুজলপূর্ণ উন্মুক্ত অপার মনুষ্যত্বের —কথা উল্লেখ করে নির্দ্বিধায় জানিয়েছিলেন যে— ‘তাঁহার প্রধান কীর্তি বঙ্গভাষা’। এরপরে নিজের সেই প্রবন্ধে বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের কীর্তি বিশ্লেষণ করে তিনি লিখেছিলেন— “বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষার প্রথম যথার্থ শিল্পী ছিলেন। তৎপূর্বে বাংলায় গদ্যসাহিত্যের সূচনা…

Read More

ঊনিশ শতকের বাংলায় ‘বাল্যবিবাহ প্রথা রদ আন্দোলন’

বাল্যবিবাহ প্রথাটি ভারতবর্ষ তথা বাংলার অন্যতম প্রাচীন সামাজিক প্রথা হলেও একটাসময়ে এই প্রথাটি ঊনবিংশ শতকের বাংলার হিন্দুসমাজ-জীবনকে রীতিমত পর্যদস্তু করে তুলেছিল। ফলে তৎকালীন বাংলার হিন্দুসমাজের প্রগতিশীল সমাজ-নেতারা বাল্যবিবাহ প্রথার বিরোধিতায় নামতে বাধ্য হয়েছিলেন। ঊনিশ শতকের বাংলার বাল্যবিবাহবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে গেলে, রামমোহন রায়ের ‘আত্মীয় সভা’র নামোল্লেখ করাটা সর্বাগ্রে প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এই সভাতে…

Read More

চর্যাপদের ভাষা বিতর্ক

চর্যাপদের আবিষ্কর্তা মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এবিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন যে, চর্যাপদে ব্যবহৃত ভাষাটি আসলে বাংলা ভাষা ছাড়া অন্য কিছুই নয়, আর সেই কারণেই তিনি চর্যাপদের পরিচয় দিতে গিয়ে নির্দ্বিধায় জানিয়েছিলেন যে, চর্যাপদের কবিতাগুলি— “হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা” ও “বৌদ্ধ সহজিয়া মতের অতি পুরাণ গান”। কিন্তু হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রচলিত অর্থে কোন ভাষাবিজ্ঞানী ছিলেন…

Read More

রথযাত্রার সাংস্কৃতিক উৎস

ঋগ্বেদে যেমন রথারোহী ইন্দ্রের কল্পনা পাওয়া যায়, বৌদ্ধদের সামাজিক উৎসব সংক্রান্ত গ্রন্থগুলিতে তেমনি রথে করে বুদ্ধমূর্তিকে নিয়ে পথ-পরিক্রমার কথা দেখা যায়। কিন্তু অতীত থেকেই উড়িষ্যা এবং বাংলায় যেভাবে রথযাত্রা উৎসব বৈষ্ণবীয় পরিমণ্ডলে অনুষ্ঠিত হয়, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে এই উৎসবের মধ্যে অন্যান্য প্রচলিত পার্বণের মত প্রাগিতিহাসের কাল থেকে সূত্রান্বেষণ করা খুব কঠিন বলেই মনে হয়। তবে ব্যাপারটা…

Read More

বৃটিশ আমলের কলকাতায় পেশাদারি পতিতাবৃত্তি

এই পৃথিবীতে মানুষের সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষকে বাঁচবার জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে। সৃষ্টির বিতর্কে না ঢুকে সাধারণভাবে বলা চলে যে, এই পৃথিবীতে মানব সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষকে তাঁর নিজের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের জন্য কাজ করতে হয়েছে। কারণ— পৃথিবীতে মানুষের জীবনধারণ করবার জন্য এই তিনটি উপাদান অপরিহার্য। ইতিহাস বলে যে, মানুষের সামাজিক বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়ে…

Read More

বাংলা কাব্যের নবযুগের প্রতিষ্ঠাতা মধুসূদন

অতীত হোক বা বর্তমান— সবকালের সাহিত্য সমালোচকরাই মধুসূদন দত্তকে বাংলা কাব্যসাহিত্যের একজন যুগান্তকারী প্রতিভাস্বরূপ স্বীকার করে নিয়েছেন বলে দেখা যায়। কিন্তু কেন তাঁকে এই সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বিশ্লেষণ করে সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্যই এই প্রবন্ধের অবতারণা। সাহিত্য সমালোচকদের মতে— মধুসূদনই বাংলা কাব্যসাহিত্যকে আধুনিকতায় দীক্ষা দিয়েছিলেন। তাঁহার কাব্যসৃষ্টির সময় থেকেই বাংলা…

Read More

পুরোনো কলকাতায় বারাঙ্গনাবৃত্তি

একটা আধুনিক শহরের সমস্ত কদর্যতাকে সঙ্গে নিয়েই নগর কলকাতার ক্রমবিকাশ হয়েছিল, আর বৃটিশ শাসনের হাত ধরেই এদেশে বারাঙ্গনাবৃত্তির উদ্ভব ঘটেছিল। ইতিহাস বলে যে, পলাশীর যুদ্ধের পর থেকেই কলকাতার নগরায়ন শুরু হয়েছিল। তখন কোন সংবাদপত্র তো দূরের কথা, ছাপার যন্ত্রের কথাও মানুষের কল্পনায় ছিল না। শৈশবের কলকাতায় লোকসংখ্যাই বা কত ছিল? ১৭১০ সালে কলকাতা, গোবিন্দপুর ও…

Read More
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!