ধারাবাহিক উপন্যাস উত্তাল ১৫

ও দিক থেকে মহাশ্বেতা দেবী প্রশ্ন করলেন, তুমি এ সব জানলে কী করে? নবীন মাস্টার বললেন, আপনাকে বলেছিলাম না… আমাদের বাড়িতে একটা ছেলে থাকে। আঁধারগ্রাম থেকে এসেছে। সেই তেরো নম্বরই তো আমাকে সব বলেছে। – তেরো নম্বর! সেটা আবার কী? – ওটাই তো ওর নাম। – এ রকম আবার কারও নাম হয় নাকি? – না,…

Read More

দুপুর

এ এমন এক বিষণ্ন দুপুর তোমার চোখের ছায়া প্রতিবিম্ব হয়ে আমার উপর এসে পড়েছে, যেভাবে অলসদিনের শেষে অশোধিত মনে পতিত হয়েও ভেসে থাকে দৃশ্য, স্নায়ুর ভেতর মায়াভাব অস্থির রাতের দাহ্য মাধুকরী শোক! দীর্ঘতম পথে কাঁটা বেছানো সঙ্কোচ আর পেঁচাদের কৌতুহলি দৃষ্টি ডাকছে সঙ্কেতে, শূন্যে, পলাতক মেঘের আড়ালে শান্ত সূর্য!

Read More

পেশা বদল

।। এক ।। বাবার এক্সিডেন্টের পর উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডিটা পেরিয়ে তারক নেমে পড়েছিল বনগাঁ-শিয়ালদা ডিভিশনে ট্রেনে হকারির লাইনে। আসলে নামতেই হয়েছিল। দেখতে দেখতে তাও প্রায় কুড়ি বছর পেরিয়ে গেল। তখন এ রাজ্যে যে সরকারের রাজত্ব, সর্বত্র তাদেরই আধিপত্য ছিল। রাস্তার ধারে শাকের ঝুড়ি নিয়ে বসতে গেলেও তাদের অনুমতি ছাড়া সুযোগ মিলত না। আর একটু উন্নত…

Read More

গোধূলিসন্ধির নৃত্যে

অনেক কথা তো বলেছো একদিন শেষে নির্বাক থেকে ছেড়ে গেলে তোমার হুঙ্কারে কেঁপেছে ব্রিটিশ ভরেছে বারেবারে তাদের জেলে জাত-বজ্জাতির ধরেছো টুটি টিপে সকলেরে দিলে সাধু বরাভয় তোমার চোখেতে জগৎ দেখেছি দেখেছি জগতেরে বাংলাময় দেশকাল ছেড়ে উঠেছো অসীমে বিশ্ব জাহানে যে নিপীড়িতের স্বজন হয়েছিলে, উঠেছিল ধ্বনি তোমার তরবারে জাগা সম্বিতের দুর্গম ওই গিরি সংকটে দিয়েছিলে তুমি…

Read More

কবি কৃষ্ণরাম দাস

কৃষ্ণরাম দাস মধ্যযুগের শেষার্ধের বাংলা সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট ও শক্তিশালী কবি ছিলেন। তিনি ছ’টি মঙ্গলকাব্য রচনা করেছিলেন; যথা— চণ্ডীমঙ্গল, কালিকামঙ্গল, ষষ্ঠীমঙ্গল, রায়মঙ্গল, শীতলামঙ্গল ও কমলামঙ্গল। কলকাতার কাছে নিমতায় তাঁর বাড়ি ছিল। এই কারণেই ‘কালিকামঙ্গল’ কাব্যের সূচনায় কৃষ্ণরাম তাঁর বাসভূমি সম্বন্ধে লিখেছিলেন— “অতি পুণ্যময় ধাম সরকার সপ্তগ্রাম কলিকাতা পরগণা তায়। ধরণী নাহিক তুল জাহ্নবীর পূর্বকূল নিমিতা…

Read More

আমি তোমায় পাহাড় ভেবে বাঁচি

রাতের বেলায় ফণীমনসাকে সাপ মনে হয়। আলো এলে, অনুমান ভুলে যাই। অনড় শামুক চলার দাগ রাখেনা, বিছানা থেকে সিলিং এর দূরত্ব কত? আমাদের পাড়ার দুপুরে, কমলা পিসির রিমোট ভরা গান চলে। হাওয়া কলের শব্দে ভাতঘুমের ঘুঙুর বাজে। যেদিন বাবা অফিস কামাই করে, রঞ্জু মায়ের হাত ছেড়ে ব্যাটিং এর চিন্তায় চৌরাস্তায় হারায়। আলো গড়ানোর খেলায়, দেবতারা…

Read More

ডাউহিল, কার্শিয়াং এর পথে

অবহেলার পাহাড়ে সুন্দর হাসি, শহরের লোকের ভিড়ে যা দেখা যায় না । অল্পতেই সেখানকার মানুষের জীবন ভরপুর, জীবন দিয়ে জীবনের দাম। বিশাল উপত্যকায় ছোট ছোট ঘরবাড়ি, ছোট ছোট ক্ষেতখামার, নিচে পাহাড়ি নদী, খাদের শেষাশেষি দিনের অফুরান রোদ। সত্যিই পাহাড়ের মানুষের অনেক কিছুর অভাব কিন্তু মুখের হাসি সব অভাবকে মুছে দিয়েছে। আসলে মানুষের সুখ দুঃখ সবটাই…

Read More

অন্ন জোগায় নারী

প্রাচীন যুগে নারীর হাতে বোনা বীজ দিয়ে চাষাবাদের প্রচলন হয়েছিল, মানুষ পশুপালন থেকে কৃষি সভ্যতার দিকে এগিয়ে গিয়েছে, সেখানে কৃষিক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা সহজেই অনুমেয়। গ্রাম বাংলার নারীদের কাছেও অনেক কাজের মধ্যে কৃষিই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বীজ সংরক্ষণ ও বপন থেকে শুরু করে, চারা রোপণ, সেচ, ফসল উত্তলন এমনকি বিপণনেও নারীরা এককভাবে ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের সামাজিক…

Read More

ধারাবাহিক উপন্যাস ‘উত্তাল’ ১৪

।।চৌদ্দ।। নবীন মাস্টারের হঠাৎ মনে পড়ে গেল মহাশ্বেতা দেবীর নাম। উনি ওঁদের ত্রৈমাসিক নাট্যপত্রের উপদেষ্টা। যে কোনও বিষয় নিয়ে ওঁর সঙ্গে আলোচনা করা যায়। বিখ্যাত লেখিকা হলেও, মানুষ হিসেবে উনি আরও বড়। লোধাদের নিয়ে যে কাজ করছেন, তা আজ কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে। পিছিয়ে পড়া, হেরে যাওয়া, অচ্ছুৎ, অবাঞ্ছিত মানুষদের নিজের পায়ে দাঁড় করানোর জন্য উনি…

Read More

চৌকাঠ

একবার কুড়িয়ে পাওয়া একটা শব্দকে কৌটায় ভরে বেশ খানিক ঝাঁকিয়ে লুড়ুখেলার দানমারা’র মতো করে ছুঁড়ে কানাপুট উঠে এসেছিল বলে ঘর থেকে গুটি বের করতে পারিনি। সাপলুডু খেললে অবশ্য ট্রেকে ওঠে যেতাম। আমি আবার সাপলুডু খেলি না। খেলি না মানে খেলতে জানি না—ব্যাপারটা তেমন নয়; সাপলুডুতে অবিরাম সন্ধ্যা নামার মতো করে ভয় নামে– ভিতর বাহির সব…

Read More

প্রকৃত কবির খোঁজে, কবিতার খোঁজে

সারাদেশে লিটিল ম্যাগাজিনের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। বাড়ছে কবিতা লেখা মানুষের সংখ্যাও। এটা আশার কথা, কেননা কবিতা চর্চা তো সাহিত্য ও ভাষা চর্চারই নামান্তর। আমাদের সংস্কৃতি ও মেধা-মননের এবং কল্পনা ও উদ্ভাবনী শক্তির প্রয়োগ ঘটে সেখানে। কিন্তু অন্যদিকে এটা আবার দুঃখেরও সংবাদ। দুঃখ এই কারণেই যে, যেভাবে লেখকের সংখ্যা বাড়ছে সেভাবে কি পাঠকও তৈরি…

Read More

এই উত্তরদেশ, এই জোড়া মহিষের দেশ (পঞ্চম পর্ব)

১৩. আপাতত পুরোন সময়ের সমুদ্র থেকে তুলে আনা যাক কবেকার সেই সিকান্দার মিস্ত্রিকে। সিকান্দার ছিলেন গৌরীপুরের রাজা প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়ার পাট হাতির মাহুত। হাতি শিকারের বা হাতি ধরবার কাজে গোয়ালপাড়া অঞ্চলে তিনি ছিলেন বিখ্যাত ফান্দি। লালজি রাজার “হাতি ধুরা” ক্যাম্পে জংলী হাতিকে পোষ মানানোর কাজে সিকান্দার ছিলেন পারদর্শী। তামারহাটের ভেঙে যাওয়া হাটের বাইরে আসতে আসতে…

Read More
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!