গোলোকেশ্বর সরকার

গোলোকেশ্বর সরকার জন্ম পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুর গ্রামে। পেশা শিক্ষকতা নেশা সাহিত্যচর্চা। বহু বছর ধরে লিখে চলেছেন কলকাতার বুলবুল, ললিত ভারতী, মনের ডাইরি, বাউল বাতাস, সাহিত্যদর্পন, রুদ্রকাল আলো আভাস সহ নবারুণ (মুম্বাই), অল্প অল্প গল্প (দিল্লি), পাহাড় থেকে সাগর (শিলিগুড়ি), চষেল (বুনিয়াদপুর), পারক (বুনিয়াদপুর), রুদোক (বুনিয়াদপুর) পত্রিকায়। এছাড়াও শরণ্যা (সিডনী, অস্ট্রেলিয়া), বাংলাভাষী (ইংল্যান্ড), আশ্রম (ক্যানাডা) তথ্যপুঞ্জ (ইতালি), বাংলাদেশ সহ দেশ বিদেশের পত্রিকায় লিখছেন তিনি নিয়মিত। তার প্রকাশিত গ্রন্থ: ঊষাতিটি (ছোটগল্প) মেখলা (ক্ষুদ্রগল্প), হসন্তিকা (ক্ষুদ্রগল্প) ও দোলিকা (ছোটগল্প সংকলন) প্রাপ্ত পুরস্কার: ২০১৫ সালে 'কলকাতা পার্ক সার্কাস লেখক-শিল্পী মহল' থেকে 'ঊষাতিটি' নামক ছোটগল্প বইয়ের জন্য সাহিত্যে স্বর্ণপদক লাভ। ২০১৯ সালে পেয়েছেন কলকাতার 'বুলবুল' পত্রিকার 'শহীদউদ্দিন খান' সম্মাননা।

মালঞ্চা এবং: বৈশালীর আনন্দ

মালঞ্চার মাটিতে নির্ঝরের কথা শুনে খুশিতে ভরে গেল বৈশালীর মন। নির্ঝরের কথাতে আনন্দে ভরে উঠল বৈশালীর প্রাণ। সেই খুশি, সেই আনন্দ ছড়িয়ে পড়ল বৈশালীর দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে। বৈশালীর দেহের ভেতর ‘মোহিনীআট্টম’ নাচ চলতে লাগল। ‘মোহিনী আট্টম’-এ ছেয়ে গেল বৈশালীর শরীরের মধ্যটা। বৈশালীর চোখে-মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠল খুশি,আনন্দ। বৈশালীর চোখ-মুখ আনন্দে কেন ছেয়ে গেল, নির্ঝর তা…

Read More

মালঞ্চা এবং: নবীন বরণ

বৈশালী ও নির্ঝর একই কলেজে পড়ে। বৈশালীর মা-বাবা ও এক ভাই আছে। মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। মা গৃহকর্ত্রী। বাবার সোনার দোকান। নির্ঝরের বাড়িতে বাবা-মা আছে। এক দাদা ও বৌদি রয়েছে। বাবার বড় কাপড়ের দোকান আছে । বৈশালীর বাড়ি বুনিয়াদপুর। নির্ঝরের বাড়ি মালদা জেলার পান্ডুয়াতে। বুনিয়াদপুর কলেজ। দ্বিতীয় বর্ষে পড়ত নির্ঝর। প্রথম বর্ষে পড়ত বৈশালী। সবে কলেজে…

Read More

মালঞ্চা এবং: বৈশালী ও নির্ঝরের কথা

বৈশালী খেয়াল করল, এত রোদ সত্ত্বেও নির্ঝরের মাথায় কোনও টুপি নেই। হাতে কোনও ছাতা নেই। গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড রোদে গরমের ঝাপটা চোখে এসে লাগে, চোখ জ্বালা করে। এজন্য বেশির লোক এই গ্রীষ্মকালে চোখে গগগস পরে। কিন্তু বৈশালী নির্ঝরের হাতে বা বুকপকেটে কোনও গগলস দেখতে পেল না। নির্ঝর বৈশালীকে দেখে দ্রুত জায়গা থেকে সরে যাচ্ছিল। বৈশালী বলে…

Read More

মালঞ্চা এবং: বটগাছ ও বৃষ্টির মধুরতা

দূর থেকে বৈশালী দেখল, গ্রামের একপাশে অনেকটা জায়গা জুড়ে একটা অনেক বড় বটগাছ রয়েছে। প্রচুর তার ঝুরি। ঝুরিগুলো মাটির মধ্যে প্রবেশ করেছে। দেখে মনে হচ্ছিল,বটগাছটি একজন বৃদ্ধ আর ঝুরিগুলো বৃদ্ধটির দাড়ি আর অসংখ্য দাড়ি নিয়ে গ্রামের মধ্যে প্রবীণ হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বটগাছটিতে বেশ কিছু বিভিন্ন রঙের পাখির ঘর ঝুলছিল। বৈশালী ধীরে-ধীরে বটগাছটির কাছে গেল। দেখল,…

Read More

মালঞ্চা এবং ঘর

এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বৈশালী ভাল করে খেয়াল করল, গ্রামটির বেশির ভাগ গাছেই লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা, আকাশি, বেগুনি বিভিন্ন রঙের ছোট-ছোট ঘর ঝুলছিল। নানা আকারের ঘর। বৈশালী এক দৃষ্টিতে গাছে-গাছে নানা রঙের,বিভিন্ন আকৃতির ঝুলে থাকা ঝুলন্ত-ঘর দেখতে লাগল। ঘর দেখতে দেখতে নিজেকে কিছুক্ষণ হারিয়ে ফেলল বৈশালী। এরপর বৈশালী আস্তে-আস্তে হাঁটতে লাগল আর গাছে লাগানো…

Read More

মালঞ্চা এবং…

।। মালঞ্চার পথে ।। ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। ‌বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল, বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ করে একটি পাবলিক বাস দাঁড়িয়ে। বৈশালী হনহন করে হাঁটতে লাগল। কাঁধে সাইড-ব্যাগ। প্রতিদিনের মতো মাধবী বৌদি প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছিল। রাস্তার মধ্যে বৈশালীর সাথে দেখা। মাধবী বৌদি দাঁড়িয়ে পড়ল। বৈশালীও দাঁড়িয়ে গেল। মাধবী বৌদি জিজ্ঞেস করল, “কি রে বৈশালী,খুবই…

Read More

গল্প: শ্রীমতি একটি মেয়ের নাম ৬

।।শেষ পর্ব।। পোস্টমর্টেম শেষ। পোস্টমর্টেম চলাকালীন আমি আমার দু’হাত দিয়ে চোখ দু’টি ঢেকে মর্গ থেকে অল্প দূরে এক জায়গায় বসেছিলাম। দরজা খোলার শব্দে আমি চোখ দুটো খুললাম। আমি হাত সরিয়ে দেখি, ডাক্তারবাবু মর্গের দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। আমি উঠে দাঁড়ালাম। আমার দেহকে কাটাছেঁড়া অবস্থায়, দ্বি-খন্ডিত অবস্থায়, চেরা অবস্থায় দেখতে পারব না বলে আমি আমার দেহের…

Read More

গল্প: শ্রীমতি একটি মেয়ের নাম ৫

।।পাঁচ।। অগ্রগতি সংঘে নবমীর পরের দিন রাতের বেলা আমি স্বপ্নে আবির ও তার বন্ধু তুহিনকে দেখেছিলাম। তারা দু’জন রাস্তা দিয়ে হেঁটে কোথাও যাচ্ছিল। আমি সেই রাস্তা দিয়ে হেঁটে-হেঁটে আসছিলাম। আমার চুল সাদা, হাত-পা সাদা, আমার সমস্ত শরীর সাদা। আমার কাছাকাছি আসতেই ওরা দু’জন আমাকে দেখে চমকে উঠেছিল। আবির তুহিনকে বলেছিল, ‘তুহিন, দেখ, এটা তো সেই…

Read More

গল্প: শ্রীমতি একটি মেয়ের নাম ৪

।।চার।। যে-নিম গাছের তলায় আমি আছি, সেই নিমগাছটি‌ থেকে কিছু শুকনো পাতা মাটিতে ঝরে পড়ল। গাছ থেকে গাছের পাতা-ঝরা দেখে আমার মনে পড়ল কবির কবিতার লাইন- ‘খসে খসে পড়ে পাতা/মনে পড়ে কত‌ কথা।’ আমার মনে পড়ল পুরনো দিনের কথা। আজ থেকে সতেরো বছর আগের কথা। তখন আমার বয়স ছিল তেইশ বছর। অবিবাহিত ছিলাম। আমি একজন…

Read More

গল্প: শ্রীমতি একটি মেয়ের নাম ৩

আমি ‘খনগান’ শুনে বাড়ি ফিরছিলাম। খনগান হলো দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী লোকগান। এই লোকগান গোলাকার জায়গায় পরিবেশন করা হয়। বাদ্যকাররা গোল জায়গার একদম মাঝখানে বসে বাদ্যযন্ত্র বাজায়। তারপর দু’হাত বৃত্তাকার জায়গা ফাঁকা রাখা হয়। এরপর দর্শকরা বৃত্তাকারে বসে। বাদ্যকারদের পরে দু’হাত ফাঁকা বৃত্তাকার জায়গা হলো মঞ্চ। এই বৃত্তাকার মঞ্চে খনগান পরিবেশন করা হয়। ‘খন’ কথার…

Read More

গল্প: শ্রীমতি একটি মেয়ের নাম ২

আমি যেখানে রয়েছি, তার থেকে অল্প কিছুটা দূরে ধীরে ধীরে ‘স্বর্গের রথ’ এসে দাঁড়াল। আমার পাশে স্বর্গের রথ দেখে চমকে গেলাম আমি। আসলে এর আগে আমি কখনও স্বর্গের রথ দেখিনি। স্বর্গের রথ দেখতে কেমন, কীরূপ তার আকার-আকৃতি, লম্বা কত, চওড়া কত, উচ্চতা কত, রথের রং কেমন… এসব কিছু অজানা ছিল আমার কাছে। কী দিয়ে তৈরি,…

Read More

গল্প: শ্রীমতি একটি মেয়ের নাম

বালুরঘাট হাসপাতাল। গ্রীষ্মকাল। দুপুর দুটো। গরম হাওয়া বইছিল। মাথার ওপর সূর্য। কড়া রোদে বাইরে থাকা মুশকিল। হাসপাতালে আসা সবাই হাসপাতাল চত্বরে একটি‌ বড় নিমগাছের ছায়াতে আশ্রয় নিয়েছিল। আমিও হাসপাতালের সীমানার ভেতর সেই নিমগাছটির ছায়াতে রয়েছি। আরও ঘন্টা তিনেক আমাকে এখানে থাকতে হবে। তবে হ্যাঁ, আমার নিকট আত্মীয় বা পরিচিত কেউ কিন্তু অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি…

Read More
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!